Rose Good Luck দ্য লাস্ট পেইন্টিং Rose Good Luck

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২৭ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:৫৮:০৫ রাত



আজিজ মিসির আর রেবেকার ডিভোর্স হয়েছিল পনের বছর আগে । সেটার একটা যুক্তিযুক্ত কারণ ও ছিল।দেশের একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হিসেবে মিসির নিজের ছবি, আর্ট কম্পিটিশন নিয়ে এতোটা ব্যস্ত থাকত। বড় লোকের মেয়ে রেবেকা যদিও ওকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল, কিন্তু ওর ওকে সময় না দেয়াতে সে ধীরে ধীরে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে মিসিরের উপরে।

রেবেকার বাবা-মা যদিও মেয়ের বিয়েটা মেনে নিয়েছিলেম, কিন্তু তাঁরা চাইতেন ভার্সিটি থেকে চারুকলায় গ্রাজুয়েট মিসির ছবি আঁকা ছেড়ে দিয়ে একটা সরকারি জবে ঢুকে যাক। রেবেকা আর মিসিরের মাঝখানে বসে তারা দর কষাকষি করতে লাগলেন। রেবেকা আর মিসির একে অন্যের কাছ থেকে মনে মনে হাজার মাইল দূরে সরে গেলেন। ওদের বারো বছরের সাজানো সংসার যেদিন ভেঙ্গে গেল, সেদিনটার কথা আজ মিসিরের তেমন পরিষ্কার ভাবে মনে নেই। অনেক বছর ভুলে থাকা দিনটা!

সবই কি ভুলে গেছে?

আজিজ মিসির কি নিজেকে ভুলেছে?

আজিজ মিসির। একজন স্বনামধন্য, ধনাঢ্য চিত্রশিল্পী। অয়েল পেইন্টিং এর কাজ তার পছন্দ। এই মাধ্যম নিয়ে তার কাজের সুনাম দেশের গণ্ডী ছাড়িয়ে দেশের বাহিরেও ছড়িয়ে পড়েছে। যখন দেশে ছিলেন, তখনো দেশের মানুষের কাছে তার পেইন্টিঙয়ের কদর ছিল। তবু যখন দেশের মানুষদের ভিতরে শুধুমাত্র একজন মানুষের কাছে তার কদর কমে গেল, সোজা দেশের বাইরে চলে গেলেন। গতপরশু পর্যন্ত ফ্রান্সই ছিল তার দেশ। সেখানের শিল্পী সমাজে আজিজ মিসির সমীহ জাগানো একটি নাম। চিত্রকলা এবং সাহিত্যের ভূবনে ফ্রান্স সর্বদাই একটি অন্যরকম আবেদন জাগানিয়া দেশ। সেখানে গত পনেরটি বছর ধরে একরকম নির্বাসনে কাটছিল আজিজ মিসিরের দিনগুলো।

বিষণ্ণ দিনগুলো... ঝরাপাতার মত এদিক সেদিক কেবলি সরে সরে যাওয়া।

রেবেকা ছিল সমগ্র দেশের ভিতরে একমাত্র সেই মানুষ, যার কাছে ওর কদর কমে গিয়েছিল। যার সাথে বিরোধ ওকে দেশান্তরী হতে বাধ্য করেছিল। মনের ভিতর রাগ অনুভব করলেন আজিজ মিসির।

আশ্চর্য হয়ে মিসির ভাবে। জোর করে নিজেকে এত বছর ধরে ভুলিয়ে রাখার পর ও আজ তবু কত কিছু মনে পড়ে যাচ্ছে!

বিদায়ের সেই দিনটিতে হৃদয়ের ভালো লাগার নক্ষত্রগুলো দু:খ বুকে নিয়ে একে একে হৃদি আকাশ থেকে ঝরে পড়ছিল অনবরত। আর মিসির একমাত্র মেয়ে ঝুমুর এর হাত ধরে নিজের বেডরুমে বসেছিল। তখন ঝুমুরের বয়স কত হবে?

দশ বছর?

হ্যা,ঝুমুরের বয়স এরকমই ছিল যখন রেবেকা আর মিসিরের ডিভোর্স হয়ে গেলো।

ঝুমুরকে যখন রেবেকা নিয়ে যেতে এলো ওর রুমে, রেবেকার বাবা-মা তখন গাড়ি বারান্দায় অপেক্ষা করছিলেন। কোনো কথা হল না। মেয়ের হাত ধরে নিজের দিকে একটু টেনে নিল রেবেকা। চাইলে সেদিন মিসির জোর করতে পারত। মেয়েকে নিয়ে কিছু জটিলতার সৃষ্টি হতো তাতে। কিন্তু তাতে ওর, ঝুমুরের কিংবা রেবেকার- কারোই কি ভালো হতো তাতে?

সেজন্যই মেয়ের হাত আলতো করে ছেড়ে দিয়েছিল।

একজন বাবার হাত থেকে উষ্ণতার প্রলেপ মাখানো একটি কচি হাত মুহুর্তে একজন অভিমানী মায়ের কাছে ফিরে আসে।

বিছানায় বসে থাকা মিসিরের দিকে পিছু তাকিয়ে সামনে এগিয়ে চলা ঝুমুরের কান্নাভেজা মুখটি-ই ছিল মিসিরের স্মৃতিতে সেদিনের শেষ দৃশ্য। ওখানেই স্থানুর মত বসে ছিল দীর্ঘসময়। একটা গাড়ির স্টার্ট হবার শব্দ... এবং ওর জীবন থেকে রেবেকার চলে যাওয়া...এর কোনোটিই কি সেদিন অনুভব করার মত অবস্থায় ছিল?

আজ দেশে ফিরে এসেছে শুধুমাত্র একসময় ওর হাত থেকে ছুটে যাওয়া সেই কচি হাতটির কারণে। সেই হাত আগামীকাল অন্য কারো হাত ধরে নতুন জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে রেবেকা ওকে ফোন করে ঝুমুরের বিয়ের খবর দিয়েছিল। বলেছিল, ‘ তুমি ইচ্ছে হলে তোমার মেয়ের বিয়ে অ্যাটেণ্ড করতে পার।‘

‘তোমার মেয়ে?’ এই দুটি শব্দ কানে বেশ বাজল মিসিরের।

আজ এতোগুলো বছর পরে ঝুমুর কেবলি ‘ওর মেয়ে’ হয়ে গেল? অথচ পনের বছর আগে এই ‘আমাদের মেয়ে ’ বলার জন্য কি জেদটাই না ধরে ছিল রেবেকা।

কেন ঝুমুর ‘আমাদের মেয়ে’ হতে পারল না?

এর জন্য কে দায়ী?

আজ পনের বছর পরে দেশে এসেছে। সাদাকালো অরণ্য- পাহাড়- নদী পার হয়ে মরুর ধুলো উড়িয়ে দুরন্ত ছুটে চলা ভাবনার লাগামহীন এক পাগলাঘোড়ায় সওয়ার হয়ে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে উত্তরার একটি ফ্ল্যাটে। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ফেলে আসা অতীতকে ভাবছিল এতোক্ষণ। কিছু নস্টালজিয়ায় ভোগাবার মত স্মৃতি মুহুর্মুহু রং বদলে হৃদয়ের অনুভূতিগুলোকে কনফিউজড করতে চাচ্ছে।

কিছু অনুভূতি... কিছু স্বপ্নকে সাথে নিয়ে হৃদয়ে বিচরণ করা গভীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রশ্বাসগুলো... দুর্দান্ত গতিময় স্বপ্ন - স্থবির বাস্তব - অর্থহীন –সম্ভাবনাহীন?

অথবা কি সম্ভাবনাময়?

কী রং তাদের?

নিজের রুমে ফিরে এলো মিসির। দেশে এসে এখানেই উঠেছে। ওর বন্ধু জহিরের ফ্ল্যাট। সে এখন সপরিবারে দেশের বাইরে। ফোনে কথা হল যখন, মিসির দেশে আসছে শুনে ওর ফ্ল্যাটেই থাকবার জন্য জোর করল। কেয়ারটেকার রয়েছে। সেই ই ওর দেখাশুনা করছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

আজ করার মত কিছু নেই। রাতে একবার রেবেকার সাথে কি দেখা করবে? ঝুমুরের সাথেও এখনো দেখা হল না। অবশ্য মোবাইলে কথা বলতে পারে। কিন্তু ইচ্ছে হল না। কেমন এক অবসন্ন অনুভূতি!

জেট লেগের অবসন্নতাকে কাটিয়ে উঠলেও কেন এই অবসন্নতা? জীবনের কাছে হার মেনে যাওয়া দুর্বার কিছু অনুভূতির গলা টিপে নিজেকে নিজের ভিতর থেকে তুলে আনতে প্রচন্ড এক ইচ্ছে শক্তি আসা যাওয়া করছে ওর ভিতর। কিন্তু ইচ্ছেটা এক্সিকিউট করার জন্য পর্যাপ্ত মনোবলের অভাবে ফিরে আসতে পারছে না সে।

গতরাতে একটা ছবি আঁকা শুরু করেছিল।

নির্দিষ্ট কিছু নয়। কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চেয়েছিল। তাই ওর কাজের ক্ষেত্রটাকে বেছে নিল সময় কাটানোর জন্য। রং আর তুলির সমন্বয়ে ওর হৃদয়ে অনেক আগে থেকে প্রচ্ছন্ন একটি মুখচ্ছবিকে ফুটিয়ে তুলতে চাইল। একটু একটু করে অগ্রসর হল। জীবনের সকল মেধা-দক্ষতা ব্যবহার করে সেই হাসিমুখটিকে তুলে আনতে চাইলো। কিন্তু রাতে কিছুই হল না।

নিজেকে এক বর্ণান্ধ শিল্পী বলে মনে হল। একজন কালার-ব্লাইন্ড! যা কিছুই আঁকে - যে রং এ আঁকে - কিছুই দেখেনা।

গত পনের বছরে আঁকার অসহ্য তাড়না ছবির পর ছবি আঁকিয়ে নিয়েছে মিসিরকে দিয়ে।

আজ মনে হচ্ছে সে বুঝি নিজেই দেখে না কী আঁকে!

আজ জীবনের ক্যানভাসে আঁকা ছবিটায় ও কোন রং নেই।

ছবি জুড়ে শুন্যতা। শুন্যতা যেন হঠাৎ সারা পৃথিবীতে।

ক্যানভাসে অস্পষ্ট মুখচ্ছবিটির দিকে তাকিয়ে মিসির ভাবে। ওর অনুভূতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে যেন বলে যেতে চায়, “ আমি একা! বড্ড একা! ... আমাকে নি:সংগ করে রং গুলো সব বারান্দার চড়ুইগুলির মতো পালিয়েছে... আমার আকাশে ইচ্ছে ঘুড়িগুলোরও কোনো রঙ নেই... আকাশটা জানি নীল... সেখানে কষ্টের বিষাক্ত নীলাভ আভা নিয়ে দুঃখগুলো সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে বেড়ায়।“

যদিও মিসির জানে পৃথিবী রঙে রঙে ভরা। তারপরও ওর মনে হচ্ছে হরেক রঙের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে সে এক বর্ণান্ধ শিল্পী। হাতের তুলিটি পাশের কাঠের টুলে রাখা ব্রাশ পটে রেখে দেয়।

নিঃসঙ্গ মিসির ঐ ফ্ল্যাটে বসে একটি প্রিয় মুখ আঁকতে গিয়ে বার বার হোঁচট খায়। সেখানে সঠিক মুখটি ভেসে ওঠেনা।

তখন ওর মনে এই চিন্তা আসে, সে আসলে কাকে আঁকতে চাচ্ছে? রেবেকাকে? সে হলে কোন রেবেকাকে? যাকে সে ভালোবেসেছিল তাঁকে? নাকি যে ওকে ছেড়ে মেয়েকে নিয়ে চলে গিয়েছিল, একবারও পিছন ফিরে তাকায়নি তাকে?

আবারো ভাবে, নাকি ঐ মুখটি ওর মেয়ে ঝুমুরের? কোন ঝুমুরের? কচি হাত ধরে বাবার কাছে থাকতে চেয়েছিল যে বাবুটি, তার? নাকি এখন এতগুলো বছর পরে অন্য কারো হাত ধরে নতুন জীবন শুরু করতে চাওয়া এক পঁচিশ বছরের তরুনীর? যার কাছে তার বাবার কোনো স্মৃতি নেই। থাকলেও সেখানে তেমন কোনো রং কিংবা উজ্জ্বলতা নেই। তাই যদি ওর মুখটি মিসিরের অবচেতন মনে থেকে থাকে, তবে সেটিকে সে কিভাবে রং দিয়ে ফুটিয়ে তুলবে?

বিক্ষিপ্ত অসংখ্য ঘটনা থেকে জন্মানো অগণিত হ্যা আর না এর মধ্যে পড়ে মিসিরের মন বিশৃংখল হয়ে আছে। এ জন্যই কি ক্যানভাসে নির্দিষ্ট কোনো মুখচ্ছবি আসছে না? রং ও ফুটছে না? রেবেকার দ্বৈত সত্ত্বা এবং ঝুমুরের দ্বৈত সত্ত্বা মিলে ওকে কনফিউজড করছে?

ফ্ল্যাটটা ছোট কিন্তু এটাকে বেশ বড়ই দেখায়। ইন্টেরিওরের বাহাদুরি। মিসিরের ক্লান্ত চোখগুলি বারান্দার রেলিং এর ওপাশে ঝুলানো অর্কিডের সবুজে শান্তি খুঁজছিল। আপনমনেই হাসল মিসির। শান্তি! শান্তি এখন সুদূর অতীত। নিজের অজান্তেই মিসির অনেক আগের এক বিকালে ফিরে গেল। অবেলায় গোসল করে বারান্দায় বসে চুল শুকাচ্ছিল রেবেকা। একটু ঠান্ডা ও লাগিয়ে ফেলেছিল। ওর বসার ভংগিটাতে কী যেন ছিল। মিসির হাতের কাজ ফেলে রেবেকার ছবি আঁকতে বসল। এত দ্রুত আলো বদলাচ্ছিল, মিসিরকে প্রায় পুরো ছবিটাই আঁকতে হয়েছিল স্মৃতি থেকে। ছবিটার এক পাশে, ছায়া যেখানে আলোর সাথে মিলেছিল সেই জায়গাটা অপূর্ব হয়েছিল। সেই ছবিটা থেকেই মিসিরের খ্যাতির শিখর অভিমুখে যাত্রা শুরু। সেই খ্যাতি শেষ পর্যন্ত প্রিয় সেই মুখটাকে আড়াল করে পাহাড়ের মত অটল দাঁড়িয়ে গেল! আচমকা এক গভীর শ্বাস পড়ল মিসিরের। ইচ্ছে থাকলে এক পায়েও লোকে পাহাড় ডিংগায়। মিসিরের যদি ইচ্ছে হতো, এই আড়াল কি সে পার হতে পারতো না? পার হয়ে কার কাছে যেতো? রেবেকা কি সেই রেবেকা ছিল তার?

নিচে কার মোবাইলে রিং হল। বিচিত্র একটা রিংটোন শোনা গেল। স্মৃতির ঘোরে রেবেকার মুখটা ছুঁয়ে দেয়ার জন্যই হয়তো হাতটা বাড়িয়েছিল। খেয়াল হতে বিষন্ন হাসল। নিজেকে সামলে নিল মিসির।

স্মৃতিকে এর বেশি সময় দেয়া যায় না। মিসির ভিতরের রুমে গিয়ে লাগেজ খুলে দেখার প্রয়োজন বোধ করল। মেয়ের জন্য কিছু গিফট আছে। দেয়ার আগে আরেকবার দেখা দরকার।

বিশাল ক্লাবঘর আর তার সামনে আরো বিশাল সবুজ লনে নানা রং এর আলো। গেইটের সামনে গাড়ি পার্ক করতেই চোখ পড়ল রিসেপশনে দাঁড়ানো রেবেকার ওপর। এত বছর মানুষ এমন একইরকম থাকে! ভালোলাগা মন্দ লাগা বোধের আগে খচ করে একটা শক্ত কাঁটার খোচা লাগল মিসিরের মনে। আজকাল মানুষের বয়স যত বাড়ে তত বোধ হয় কমেই যায়! মিসির ও আগের চেয়ে সুন্দরই হয়েছে। কিছু সৌন্দর্য্য এসেছে বিত্ত, খ্যাতি আর আরামের হাত ধরে, কিছু যুগের ফ্যাশনে। রেবেকাকে দেখে মিসিরের অল্পবয়সীদের মত ঈর্ষা হল হঠাৎ। সবাই দেখে এই রূপ, শুধু মিসির না! অথচ কত মন দিয়েই না দেখতো মিসির! অভিমান হল কি? চোখ রেবেকার চোখে পড়ার আগেই সরিয়ে ছিল, মন ফিরাতে একটু সময় লাগল মিসিরের।

গাড়ি থেকে নামতে নামতে রেবেকার সাথে চোখাচোখি হবার প্রস্তুতি নিল মিসির।

কে যেন ডেকে রেবেকাকে ভিতরে নিয়ে গেল। মিসিরের আসলে পথে একটু দেরীই হয়ে গিয়েছিল। দুই একজন আত্মীয় এসে এগিয়ে নিল মিসিরকে।

আকদ আগেই হয়ে গিয়েছিল। স্টেজে মেয়েকে বিয়ের সাজ দেখে চিনল মিসির। পাথরের মত লাগল নিজেকে ওর। কত সুন্দর লাগছে ঝুমুরকে! কান্না আসতে কি চাচ্ছে! মিসির অসহায় বোধ করল। কেন এত ভাংচুর হল? আজ সে নিজের মেয়ের বিয়েরে আগন্তুক! আবার মনে হল, কেন সে আসতে গেল? কে যেন ঝুমুরকে ফোন করল। সে রিসিভ করে মাথা নাড়ল, কিছু বলল। মোবাইল অফ করে স্টেজের সামনে কাউকে খুঁজল। মিসিরের উপর তার চোখ এক মুহুর্ত স্থির হল।নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে গেল ঝুমুর। মিসির হঠাৎ বুঝল ঝুমুর স্টেজ ছড়ে বাবার কাছে আসছে! ঝুমুর নেমে আসতেই মিসির, রেবেকা এবং ঝুমুর সামনাসামনি হয়ে গেল।

ঝুমুর বাবাকে ধরে ছোট বাচ্চা মেয়ের মত সমস্ত মেক আপ নষ্ট করে ফেলল কেঁদে কেটে। রেবেকার বিউটি পার্লার ফেরত চোখে পানি টলমল করে উঠল। মেয়ের বিদায়ের কষ্টে, না এক সময়ের গভীর ভালোবাসার মানুষকে এত বছর পর কাছে পেয়ে, মিসির ধাঁধায় রইল।

কথা হল। কিছু ভদ্রতাও হল। কিন্তু মিসির বা রেবেকা কেউ কারো সীমানার বাইরে আসতে পারল না। তবু দুজনেই বুঝল, ঝুমুর তাদের বন্ধন হয়ে রয়ে গেছে! থাকবে। স্বামী-স্ত্রীর ভিতরে ডিভোর্স খুব সীমিত কিছু আচার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে মাত্র! বিচ্ছেদ আসলে পরিপূর্ণ হয় না কখনো! মিসিরের সাথে রেবেকার সম্পর্ক এই স্বামী-স্ত্রী বাদ দিয়ে ঝুমুরের বাবা-মার হয়ে থাকবে বাকীটা জীবন। এই অনুভূতি নিয়েই মিসির আবারো ফ্রান্সে ফিরে যায় নিজের নির্বাসিত জীবনে। রেবেকা সামান্য অস্বস্তি বোধ করল। অহংকার যাদের অলংকারের মত প্রিয় তারা একে সহজে হারাতে চায়না। আরেকটা নতুন জীবন এত গুলো বছরে গড়ে উঠেছে, রেবেকার তাকেও ছাড়তে মন চাইল না। সে থেকে যায় যেভাবে এই ক'বছর ছিল। ঝুমুরের নতুন জীবন শুরু হল। ঝুমুর ভাবল , কোন অবস্থায় সে তার বাবা মায়ের করা ভুলের পুনরাবৃত্তি করবে না। তাদের সামনের দিনগুলিতে তারা সবাই ভালো থাকবে, হয়তো আরো ভালো থাকবে...

ফ্রান্সে নিজের রুমে আজিজ মিসির। যে দূরে চলে গেছে, তবু এত কাছে,...তবু দূরে... তার মুখ ক্যানভাসে আঁকার চেষ্টা করছে।

শেষ তৈলচিত্রে আঁকছে হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা - ভালো লাগা দিয়ে সেই হাসিমুখ।

এ কি ভালোবাসা! এ কি ভালোলাগা! তীব্র কষ্ট যেন হিমাংকের বহু নিচে নিয়ে যায় ওর আংগুলগুলোকে।

তুলি এঁকে যায়।

সে কি ভুল রেখা ভুল রঙে আনন্দ আঁকে! দিশেহারা লাগে। আনন্দ নেই! ক্যানভাসে শুধুই সাদাকালো কষ্টের ছাপ - তার মুখচ্ছবি! একজন রঙ বিশেষজ্ঞের জীবনের শেষ ছবিটি - অজানা রঙে আঁকা। অতিপরিচিত একদার আনন্দে উদ্ভাসিত হাসিমুখ! সে আজ কষ্টের তীব্রতায় বিবর্ণ, পাংশুটে। রং নেই। রেখাগুলি কথা শুনবে না! ক্যানভাসে আঁকে যেন তার কষ্টভরা মুখ নয়, এক অহংকারী শিল্পীর ব্যর্থতার ছবি! Rose Good Luck

মূর্ত উপহাস!

(সমাপ্ত)

বিষয়: সাহিত্য

১২৬৯ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

289028
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:০০
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : খুব সুন্দর লিখা ,পড়ে ভালো লাগলো
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:০৯
232709
ফেরারী মন লিখেছেন : Time Out Time Out Time Out Time Out
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:১৭
232712
মামুন লিখেছেন : ভালোলাগা রেখে গেলেন, অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
289037
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:১৬
ফেরারী মন লিখেছেন : বিয়ের আগেই এরকম ডিভোর্সের কাহিনী পড়লে তো সংসারে ঝামেলা বাড়বে। Broken Heart Broken Heart আমার জীবনে এরকম ঘটুক আমি তা চাই না। আমি ভালোবাসতে চাই ইচ্ছেমত যতখুশী

লেখায় +++++++
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:২৫
232716
মামুন লিখেছেন : এর একটি পজিটিভ দিকও রয়েছে কিন্তু। কেন ডিভোর্স হল, সেটার কারণ জেনে নিজের জীবনে সেগুলো পরিহার করলে জীবনকে সুন্দর ভাবে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।
এখানে আজিজ মিসিরের অনেকগুলো ভুল ছিল-
১)মেয়ের বাবা-মায়ের মতের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র ভালোবাসার জন্য রেবেকাকে বিয়ে করেছিল।
২)অসম আর্থিক অবস্থা
৩)বিয়ের পরে নিজের পেইন্টিঙের জন্য রেবেকাকে পর্যাপ্ত সময় না দেয়া
৪) আরো একটু দৃঢ় মনোবলের হওয়া উচিত ছিল।
এরকম অনেক কিছু খুজলে পাওয়া যাবে যা মিসিরের ব্যাপারে নেতিবাচক ছিল। শুধুমাত্র বিয়ের আগের ভালোবাসাকে পুজি করে সংসার জীবন এগিয়ে নেয়া যায় না। ভালোবাসা বিয়ের পরে বেশী প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আগেই যদি সব শেষ করে দেয়া হয়, পরে জীবনটা পানসে লাগে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আল্লাহপাক যেন আপনার জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ে অঢেল ভালোবাসা সহ ভালোবাসার মানুষ দান করেন-আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
২৮ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০৮
232807
ফেরারী মন লিখেছেন : ঠিক বলেছেন। ভালোবাসার মানুষকে পর্যাপ্ত সময় দিতে না পারলে সে অন্য কোথায় সম্পর্ক বা পরকীয়ায় বা ডিভোর্সের মত ঘটনা ঘটাতে পারে। এটা স্বাভাবিক। সব মেয়েই চায় তার প্রিয়জনকে সবসময় কাছে পেতে। তাকে সবসময় ভালোবাসুক আদর করুক। Love Struck Love Struck
289051
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৩০
নাছির আলী লিখেছেন : মিসির এবং রেবেকার ডির্ভোস থেকে শিখ্খা নিয়ে কাজে লাগাইতে পারলে ভালবাসা অটুথ থাকবে।সত্যিই অনেক সুন্দর হেয়েছে লিখাটা অনেক ভালো লাগলো।যাযাকাল্লাহ
২৮ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৪৪
232851
মামুন লিখেছেন : ভালো লাগার অনুভূতি জানিয়ে সাথেই রইলেন, অনেক ধন্যবাদ ভাই।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
289074
২৮ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:১৫
কাহাফ লিখেছেন :

'অহংকার যাদের কাছে অলংকারের মত প্রিয়!তারা সহজে তা হারাতে চায় না!'
তেমনি 'বিভ্রান্ত কে আকড়ে ধরে উদ্ভ্রান্তের মত যারা চলে,তারাই হারায় সব!'

"কে বেশী অপরাধী আমি না-কী তুমি!এক দিন কেদেঁ কেদেঁ বলবে!!!"
phbbbbt Praying phbbbbt
২৮ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৪৫
232852
মামুন লিখেছেন : বাহ! চমৎকার বলেছেন!
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
289125
২৮ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৫০
ঝিঙেফুল লিখেছেন : গল্পটা বেশ ভালো লেগেছে Thumbs Up Rose Rose Rose
২৮ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৪৫
232853
মামুন লিখেছেন : আমার ব্লগে স্বাগতম!
ভালো লাগা রেখে গেলেন, অনেক ধন্যবাদ।Good Luck Good Luck
289571
২৯ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:১৮
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : জীবনটা বড়ই কঠিন! তারপর নিজেদের হিসেব কষতে ভুল হলে বাকি জীবন মাশুল দিতে দিতে যেতে হবে!
২৯ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৮
233294
মামুন লিখেছেন : সুুন্দর অনুভূতি রেখে গেলেন, অনেক ধন্যবাদ। সহমত আপনার সাথে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File